আজকে আমি কথা বলবো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা একজিমা নিয়ে।
একজিমা শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু এই শব্দটি “কিন্তু” শব্দটির মতো সাধারণ নয় । এই একজিমার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ এবং অনেক ধরনের হয়ে থাকে এই একজিমা। কখনো কখনো এটা হতে পারে বংশগত, কখনো কখনো এটা হতে পারে অভ্যান্তরীন কোনো কারণে ঘটে যাওয়া একটি রোগ।
আজকে আমি কথা বলবো বংশগত যেই একজিমা রয়েছে সেটি নিয়ে। তার আরেকটি নাম হচ্ছে এটোপিক একজিমা বা পেইটইন পেটালেস।
এটিকে কেনো আমরা বংশগত বলছি?
কারণ হচ্ছে এটির সাথে বংশের বিভিন্ন রোগের বা তার আত্নীয় স্বজনের বিভিন্ন রোগের যোগাযোগ রয়েছে। যার এই একজিমাটি দেখা যায়, তার দেখা যায় যে অন্যান্য আত্মীয় স্বজন কিংবা এজমা বা হেপি নামক রোগের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বা এই রোগটি দেখা যায়। সাধারণত বাচ্চাদের দুর্বল শরীরের ভেতরে কিন্তু এই একজিমাটি দেখা যায়। আমরা ইদানীং দেখি যে, বিশেষ করে শীতকালে যখন আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায় তখন এই রোগগুলো বেশি হয়ে যায়।
এটা বোঝার একটি সহজ উপায় হচ্ছে যে, ছোট বাচ্চা যারা সাধারণত ছয়মাস থেকে দুই বছরের ভেতরে, তাদের বিশেষ করে গালে, হাতে এই জায়গা গুলোয় অনেক সময় লাল লাল ছোট ছোট পুশকুনির মতো দেখা যায়। অনেক সময় ঘামাচির মতো পুশকুনি খুব ইচিং (চুলকানী) এবং সেই সাথে রেডনেস বেশ লাল হয়ে আছে জায়গাটি এবং রাফ স্কিনটা অত্যান্ত রাফ। তো এই সমস্যা গুলো যদি আমরা দেখি তাহলেই কিন্তু বুজে নিবো যে, এটি এটোপিক একজিমা।
এই রোগটি থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি পেতে পারি?
সাধারণত যাদের এটোপিক একজিমা থাকে তাদের কিন্তু স্কিন অত্যান্ত ড্রাই থাকে এবং এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যেই জায়গাতে বাচ্চাটি চুলকোবে সেখানে কিন্তু ছোট ছোট পুশকুনির মতো দেখা যাবে এবং একজিমা হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটিকে কন্ট্রোল করার জন্য ত্বককে কোনো ভাবেই আমরা শুষ্ক হতে দিবো না। ত্বককে ময়েশ্চারাইজে ভালো ভাবে একটি ময়েশ্চারাইজার দিয়ে আমরা ত্বককে তৈলাক্ত করে রাখবো। এটি হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে কন্ট্রোল করার উপায়।
সে ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে এটি সামান্য কিংবা মাঝারি নাকি বেশি সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অনেক সময় মাইলস্ট্রেট এর প্রয়োজন হয়। অনেক সময় এটির সাথে ইনফেকশন থাকে বা এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হয় এবং সেই সাথে ইচিং কন্ট্রোল করার জন্য বা চুলকানি কন্ট্রোল করার জন্য এন্টিহিস্টাবিন অবশ্যই দিতে হয় এবং আরো কিছু বিধি নিষেধ মানতেই হবে।
তার মধ্যে একটি হচ্ছে অনেক সময় ধরে কিন্তু গোসল করানো যাবে না। খুব গরম পানি ব্যাবহার করা যাবে না অতিদ্রুত ইশ্বদুগ্ধ পানি দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে এবং সাবানের ব্যাবহারটাকে একেবারেই কমিয়ে আনতে হবে। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন এবং গ্লিসারিন যুক্ত সাবান এবং গোসলের পরপরই সম্ভব হলে তিন মিনিটের ভেতরে পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে পেলতে হবে। পুরো শরীরে যাতে ত্বক কোনো ভাবেই শুষ্ক হতে না পারে এবং এই ময়েশ্চারাইজার দিয়ে তার শরীরের পানিটাকে ঠিকমতো ধরে রাখতে পারে। আরেকটি কথা হচ্ছে এধরনের বাচ্চারা কিন্তু উলের কাপড় পরিধান করতে পারবে না। কম্বলের ব্যাবহারও এড়িয়ে চলা উচিত। তার পরিবর্তে কাঁথা কিংবা লেপ ব্যাবহার করতে হবে। ঘরে কার্পেট রাখাও যাবে না। সেই সাথে পশুপাখির ব্যাবহার, পশুপাখি পালাও কিন্তু আমরা নিষেধ করে থাকি।
কারণ এই ধরনের বাচ্চাদের এই জিনিসগুলোতে এলার্জি বেশি থাকে। ডাষ্টে এধরনের বাচ্চাদের এলার্জি বেশি থাকে। এই জিনিসগুলো কন্ট্রোল করার পরও যদি কন্ট্রোল না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার মেডিসিন প্রয়োজন, সেটি ব্যাবহার করে যদি এই নিয়মগুলো ঠিকমতো মানা হয় তাহলেই এই একজিমাকে অনেকাংশেই কন্ট্রোল করা সম্ভব।
ডঃ আনজিরুন নাহার আসমা
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
চেম্বারঃ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
ভবন -৬, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা -১২০৫।
সিরিয়ালঃ ০১৩২৪-১৬৯৯৬৯, ০১৯৪৪-৮৫০৭০৬
Discussion about this post