দীর্ঘদিন যাবত অনেকেই খাবার গিলতে সমস্যায় ভূগেন। মানে অনেকেরই দেখা যায় যে, হঠাৎ করে এক দুইবার খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে। এটা কিন্তু প্রায়ই হতে পারে। অনেক সময় খাবার দ্রুত খেতে গিয়েও গলায় আটকে যায়।
আমাদের খাবার গিলতে সমস্যা গুলোর কারণ গুলো সাধারণত কি কি হয় ?
প্রথমে যেই কারণটা আমরা দেখি যে, খাবার অনেকের ক্ষেত্রে যখন পাকস্থলীতে চলে যায় খাদ্যনালি দিয়ে, সেটা আবার উপরের দিকে উঠে আসে। মানে অনেকটা উল্টো প্রবাহ বা যেটাকে বলা হয় রিপ্লেক্স। এটা অনেক সময় গ্যাস্টিকের বা পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। এটাকে আমরা ডাক্তারি ভাষায় বলে থাকি গ্যাস্ট্রোএসোপেজিয়ান রিপ্লেক্স ডিজঅরডার।
সুতরাং খাবার গিলতে যদি কোনো সমস্যা হয়, এধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা একটা কারণ হয়ে দাড়ায়। এই গ্যাস্ট্রোএসোপেজিয়ান রিপ্লেক্স ডিজঅরডার যাদের থাকে তাদের খাবার গিলতে সমস্যার পাশাপাশি হজমেও সমস্যা হয়, চুয়া ডেকুর ওঠা, অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়াও করতে পারে বা বুকে ব্যাথাও হতে পারে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা টনসিলের সমস্যায় ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রে টনসিলের সমস্যাটা প্রায়ই দেখা যায়। বছরে যদি তিন থেকে চার বারের বেশি টনসিলের সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বলি সার্জারির দরকার হতে পারে। তো যাদের টনসিলে সমস্যা থাকে ওদের দেখা যায় যে, জ্বর, গলা ব্যাথা এর পাশাপাশি খাবার গিলতেও সমস্যা হয়। প্রথমে তরল জাতীয় খাবার গিলতে সমস্যা হয় এবং আস্তে আস্তে দেখা যায়, শক্ত খাবার গিলতেও সমস্যা হয়।
তৃতীয়ত যেই কারণটা অনেক ক্ষেত্রেই আমরা যেটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি যে, খাবার গিলতে সমস্যার এই ঘটনাটা অনেক সময় ক্যান্সারের সাথে জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রোগী দীর্ঘদিন যাবত ওদের ক্ষুধামন্দার হিস্ট্রি থাকে, অরুচি থাকে । আস্তে আস্তে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। প্রথমে দেখা যায় যে, শক্ত খাবার খেতে পারেন না, তারপরে কিছুটা নরম খাবারও খেতে পারেন না। অনেক দিন পর আস্তে আস্তে তরল খাবারে সেটা চলে আসে এবং কিছুদিন পরে দেখা যায় যে, তরল খাবারটাও গিলতে পারেন না। দেখা যায় যে, খাদ্যনালির ক্যান্সার বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে এই রোগটা হতে পারে। যেটা অনেক বড় একটা কারণ।
তো এক্ষেত্রে রোগীর উপসর্গ গুলো কি হয় ?
যেহেতু কারণ গুলো বললাম সাথে সাথে আমি উপসর্গ গুলোও অলরেডি আপনাদের কাছে বলেছি। তারপরও বলছি যে, রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, চুয়া বা টক ডেকুর ওঠার সমস্যা থাকতে পারে, টনসিলের রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বর, গলা ব্যাথা, গলার মধ্যে একটা খুব খুশখুশে টাইপের একটা কাশি হয়ে যাওয়া এরকম উপসর্গ গুলো থাকে, আর ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে বললাম যে ওজন হ্রাস পাবে, ক্ষুধামন্দা থাকবে খাবারে অরুচি থাকবে। আস্তে আস্তে শরীরটা দেখা যাবে নির্জিব হয়ে যাবে, মনে হবে শরীরে বড় কোনো ধরনের রোগ যেনো বাসা বেঁধে গেছে।
সুতরাং এধরনের সমস্যা হলে আমরা কি করবো ?
আমরা যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবো। কারণ যার গ্যাস্ট্রোএসোপেজিয়ান রিপ্লেক্স ডিজঅরডার হয় সেক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি নির্ণয় করে অনেক সময় উপযুক্ত সময় নির্ণয়ের মাধ্যমে, ঔষধের মাধ্যমে এটা কন্ট্রোলে নিয়ে আসা সম্ভব। আর যদি টনসিলের কারণে হয় সেটা আপনি একজন এয়েন্ট্রি ডাক্তার দেখিয়ে যদি টনসিল অপশরন করা লাগে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এটা অপশরন করে নিন। দেখা যায় যে, অনেক সময় টনসিলের ইনফেকশন আবার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেলে সেখান থেকে কিন্তু তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
তৃতীয়ত যদি ক্যানসারের কারণে হয়, সেক্ষেত্রে আমরা ক্যান্সারের যেই টেষ্টগুলো থাকে অনেক সময় শরীরের অন্য কোনো জায়গায় ক্যান্সারের জীবাণুটা ছড়িয়ে পড়েছে কি না সেটা নিয়ন্ত্রণ করে কেওমো থেরাপি, রেডিও থেরাপি বা সার্জারীর মাধ্যমে সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি।
অতএব যেকোনো কিছু অবহেলা না করে যদি এধরনের কোনো সমস্যা অর্থাৎ খাবার গিলতে সমস্যা, ঢোকের সমস্যা যদি হয় বা কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হন ।
ডঃ সায়লা হক
এমবিবিএস (ডিইউ), পিজিটি (মেডিসিন)
মেডিসিন ফেলোশিপ (ভারত)
গ্যাস্ট্রোএন্টেলজি এন্ড লিভার বিশেষজ্ঞ।
ট্রমা সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।
সিরিয়ালঃ ০১৩১৮-০৭৪৯০৯
Discussion about this post