আমরা সবাই জানি একটা গর্ভকালীন সময় মোট চল্লিশ সপ্তাহ। এই চল্লিশ সপ্তাহে আটাশ থেকে চল্লিশ সপ্তাহ যে সময়, সেই সময়টাকে আমরা বলে থাকি শেষের তিন মাস। এই সময় একজন গর্ভবতী মা তার বাচ্চা সারাদিনে কতবার নড়ছে সেটি গুনে কিন্তু বুঝতে পারবেন বাচ্চা কেমন আছে।
আমরা সাধারণত বলে থাকি বারো ঘন্টায় বাচ্চা কমের পক্ষে দশ থেকে বারো বার যদি নড়ে তাহলে সেই বাচ্চা ভালো আছে। যদি এর কম নড়ে তাহলে সাথে সাথে আপনি যেই ক্লিনিকে দেখাচ্ছেন অথবা যে ডাক্তারকে দেখাচ্ছেন তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ এই শেষের তিন মাস কিন্তু একজন গর্ভবতী মা এবং গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় বাচ্চা পরিপূর্ণ ম্যাচিউর হয়ে যায় এবং সেই বাচ্চা যদি আমরা ডেলিভারি করি সেই বাচ্চা কিন্তু বাঁচানো সম্ভব।
আমরা অনেক সময় শুনতে পাই যে, অনেকের মরা বাচ্চা হয়েছে, ডেলিভারির এক সপ্তাহ আগে বাচ্চা মারা গেছে। এই যে, দূর্ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোর কিছু কিছু কারণতো অবশ্যই আছে। তো এই দূর্ঘটনাগুলো আমরা অনেকটাই এড়াতে পারি। যদি একজন গর্ভবতী মাকে আমরা শিখিয়ে দেই যে, গর্ভের শেষ তিন মাস কিভাবে বুজবে যে তার বাচ্চাটি ভালো আছে?
আমরা দুইভাবে বাচ্চার যে নড়াচড়া সেটি বুজতে পারি।
- প্রথম পদ্ধতিটি হচ্ছে যে, প্রতি তিনবেলা –
আমরা খাবার খাই। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার। এই তিনবেলা খাওয়ার পরে ত্রিশ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তারপরের যেই একঘন্টা সেই একঘন্টা বাম দিকে কাত হয়ে শুয়ে বাচ্চার নড়াচড়া গুনতে হবে। তাহলে একটা সিম্পল উদাহরণ আমি ধরে নেই যে, একজন সকালে নাস্তার পরে দেখলো যে, তার বাচ্চা একঘন্টায় নড়লো তিন বার, দুপুরের খাওয়ার পর দেখলো দুইবার এবং রাতে খাওয়ার পরে দেখলো বাচ্চা নড়লো চার বার। তাহলে আমাদের এখানে টোটাল কতো?
আমরা দেখতে পাচ্ছি টোটাল নড়ছে হচ্ছে নয় বার। এই নয়কে যদি আমি চার দিয়ে গুন করি তাহলে দেখবো যে, মোট বাচ্চা নড়ার সংখ্যা হচ্ছে ৩৬ বার। তাহলে সারাদিনে সেই বাচ্চাটি নড়েছে মোট ৩৬ বার। যেখানে আমরা গর্ভবতী মাকে বলে দেই কমের পক্ষে দশ থেকে বারো বার এই হচ্ছে একটা পদ্ধতি।
- আরেকটা পদ্ধতি হলো-
সকাল দশটা অথবা নয়টা থেকে সেই গর্ভবতী মা তার বাচ্চা নড়াচড়া গুনা শুরু করবে এবং একটি কাগজে সে নোট করে রাখবে। যখন বাচ্চা নড়াচড়া দশ থেকে বারো বার হয়ে যাবে তখন কিন্তু কাউনটি বন্ধ করে দিতে হবে। অতএব মোটামুটি এই সহজ পদ্ধতিতে একটা মা কিন্তু তার গর্ভের বাচ্চা কেমন আছে সেটি খুব সহজেই বুজতে পারে।
এছাড়াও বাচ্চার নড়ার যেই গতি যে ইন্টেন্সিটি সেটাও কিন্তু মা অনেক সময় বুঝতে পারে। অনেক সময় আমাদেরকে বলে যে, বাচ্চা নড়ছে কিন্তু আগের মতো ওরকম নড়াচড়া করছে না, শক্তিশালি মনে হচ্ছে না। এসমস্ত ক্ষেত্রে বাচ্চাদের নড়াচড়া কম অথবা নড়াচড়ার যে গতি দূর্বল নাকি শক্তিশালি এসমস্ত কিছু বিচার করে আমরা কিছু স্পেশাল টেস্টও করতে পারি।
আবার অনেক সময় টেস্ট করে বাচ্চা এবং মায়ের যে একটা সাধারণ কন্ডিশন সেটা বুজতে পারি এবং এটা বুজেই কিন্তু আমরা যদি আগেবাগে কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় সেটি নিতে পারি। আমার মনে হয় সবাই খুব সুন্দর ভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, গর্ভের শেষ তিন মাসে আমরা কিভাবে গর্ভের একটি সন্তান সুস্থ আছে সেটা বুজতে পারি।
আজ এই পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিজের খেয়াল রাখুন।
প্রফেসর ডাঃ সেলিনা আক্তার
গাইনোকলজিস্ট, বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারস্কপিক সার্জন
এমবিবিএস, এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অবস্)
ডিএমএসএফএমএস (ল্যাপারস্কোপিক এন্ড এন্ডোস্কপিক সার্জারী।
সিনিয়র কনসালটেস্ট
চেম্বারঃ লেকভিউ ক্লিনিক, রোড- ৭৯, বাড়ি-৫, গুলশান -২, ঢাকা।
সিরিয়ালঃ ০১৭৬০-২৩২৯৫৯
Discussion about this post